ইমতিয়াজ আহাম্মেদ(মাগুরা জেলা প্রতিনিনিধি): পূজাসম্প্রীতির বার্তা দিতেই মাগুরাতে প্রতি বছর দূর্গাপূজার ঠিক একমাস পর বাংলা কার্তিক ও ইংরেজি নভেম্বর মাসে আয়োজিত হয় পাঁচদিনব্যাপী কাত্যায়নী পূজা ও মাসব্যাপী মেলা।
বাংলাদেশে দূর্গাপূজা হিন্দু ধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসব হলেও কাত্যায়নী পূজা মাগুরার হিন্দু সমাজের জন্য প্রধান উৎসব হিসেবে বিবেচিত। সমগ্র উপমহাদেশের আর কোথাও মাগুরার মত এতটা জাঁকজমকপূর্ণভাবে কাত্যায়নী পূজা উদযাপিত হয় না। কাত্যায়নী হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিশেষ রূপ এবং মহাশক্তির অংশবিশেষ। মাগুরা সদরের পারনান্দুয়ালী গ্রামের রূপচান সকারের (রাজবংশ মাঝি সম্প্রদায়) পুত্র কেষ্টপদ সরকার ১৯৩৯ সালে নিজবাড়ীর অঙিনায় সর্বপ্রথম এই পূজা শুরু করেন।
১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এখানে এ পূজা চলতে থাকে। ১৯৫৩ সাল থেকে পুনরায় পারনান্দুয়ালী গ্রামের সতীষ চন্দ্র মাঝি নিজ বাড়ীর আঙিনায় এ পূজা শুরু করেন। পরবর্তীতে মাগুরা নতুন বাজার এলাকায় এ পূজা জাঁকজমকপূর্ণভাবে শুরু হয়। এরপর থেকেই মাগুরার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পূজাটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
পূজা উপলক্ষ্যে গোটা শহরকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। চোখ ধাঁধানো আলোকস্জ্জাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয় দৃষ্টিনন্দন তোরণ, প্যান্ডেল। পূজামন্ডপগুলো তৈরি করা হয় প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্যর স্থাপত্যকলার আদলে এবং সাম্প্রতিক সময়ের উল্যেখযোগ্য ঘটনার আলোকে। মাগুরায় এই বর্ণিল আয়োজনের কাত্যায়নী উৎসবে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লাখ লাখ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি নেপাল, ভারত ও অন্য দেশ থেকে বহু দর্শনার্থী ছুটে আসেন। পাঁচদিন পর পূজা শেষ হয়ে গেলেও কাত্যায়নী উৎসব কেন্দ্রিক জমজমাট মেলা চলে এক মাস ধরে। মেলায় সূইঁ-সূতা থেকে শুরু করে সবকিছু পাওয়া যায়। কাঠের আসবাবপত্র, মাটির তৈজসপত্র, খেলনা, পুতুলনাচসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা আয়োজন থাকে।
দেশের দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা মেলায তাদের পসরা সাজিয়ে বসেন। ধর্মীয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ মাসব্যাপী মেলা কাত্যায়নী পূজাকে আরো উৎসবমুখর করে তোলে। কাত্যায়নী পূজার জনসমাগমকে কেন্দ্র করে আজও পর্যন্ত কোন দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়নি। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।